এবার ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্যুুপ। অনেক ফিলিস্তিনি এখন বাধ্য হয়ে এ ধরনের খাবার খাচ্ছেন। এ সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ভাইরাল হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, এক ফিলিস্তিনি পরিবার সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় পশুপাখির খাবার ঘাস খাচ্ছেন। ফিলিস্তিনি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলের ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চালানো হামলায় গাজাবাসী কতটা অসহায় হয়ে পড়েছেন, সেটির নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে এই ছবিতে।
এদিকে ঘাস, সঙ্গে লেবু দিয়ে ইফতার করছে এক ফিলিস্তিনি পরিবার। ছবিটি দেখার পর বেশিরভাগ মানুষই ব্যথিত হয়েছেন। আবার অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে ক্ষুধার তাড়নায় যে ফিলিস্তিনিরা ঘাস খাচ্ছেন সেগুলো তাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে কি না?
গাজার এক পরিবার সংবাদমাধ্যম মিডেল ইস্ট আইয়ের সাংবাদিককে জানিয়েছেন, তারা ঘাস তুলে সেগুলো বাধ্য হয়ে রান্না করে খাচ্ছেন। তারা জানিয়েছেন, ঘাস হলেও শিশুদের সঙ্গে তারা মিথ্যা বলেন। শিশুদের তারা বলে থাকেন এগুলো মুলুখেয়া। যেটি উদ্ভিদ বিশেষ একটি খাবার। অপর সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরীফ নিশ্চিত করেছেন, তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় গাজার অনেক মানুষ ঘাস খাচ্ছেন।
ঘাস কি খাওয়া যায়, এটি নিরাপদ? ঘাস মানুষের খাওয়ার উপযোগী এবং এটি বিষাক্ত কোনো কিছু নয়। কিন্তু এটি মানুষের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে যদি দীর্ঘদিন খাওয়া হয়। ঘাস পানি আর লিগনিনের সমন্বয়ে তৈরি। লিগনিন এমন একটি প্রোটিন যেটি মানুষের পাচনতন্ত্রের জন্য ভাঙা কঠিন। প্রাণীর জন্য, যেমন গরু, ঘাস খাওয়া কোনো সমস্যা নয়। কারণ তাদের পাচনতন্ত্র এটি সহ্য করতে পারে এবং ঘাসে থাকা স্টার্চ এবং সেলুলোসকে অধিগত করতে পারে।
কিন্তু ঘাসে অতিরিক্ত পরিমাণ সেলুলোস থাকার অর্থ হলো মানুষের জন্য এটির কোনো পুষ্ঠিগত উপকারিতা নেই। এছাড়া মানুষের দাঁতের জন্য ঘাস ক্ষতিকর। কারণ ঘাসে প্রচুর পরিমাণ সিলিকা বা বালু থাকে। যা ধীরে ধীরে দাঁত নষ্ট করে ফেলতে পারে। কিন্তু প্রাণীর দাঁত এমনভাবে তৈরি যে এই সিলিকা তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
এছাড়া ঘাসে প্রচুর পরিমাণ ময়লাও থাকে। অনেক জায়গায় ঘাসে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ঘাস খেলে মানবদেহে ক্যান্সার ও সন্তান জন্মদানগত সমস্যা হতে পারে। ঘাস যেহেতু মানব দেহের পাচনতন্ত্র ভাঙতে পারে না ফলে এটির কারণে বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে। আর বেশিরভাগ ঘাসই হজম হয় না। ফলে এ থেকে কোনো পুষ্টিই পায় না মানুষ।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, গাজার শিশুরা ঘাস সংগ্রহ করছে। এক মা জানিয়েছেন, তার শিশু খুবই দুর্বল এবং সবসময় ডায়রিয়াতে ভুগছে। আর তাদের চেহারা সব সময় হলুদ হয়ে থাকে। ময়লা পানি ও ঘাস খাওয়া শুরুর পর থেকেই মূলত এমনটি হচ্ছে। সূত্র: মিডেল ইস্ট আই